মমতা কে

শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় – cm@wb.gov.in
মুখ্যমন্ত্রী, পশ্চিম বঙ্গ, ভারতবর্ষ

তারিখঃ ৫ই ডিসেম্বর, ২০২০

বিষয়ঃ কোভিড-১৯ ও জড়িত ব্যক্তি স্বাধীনতাহানি, বিজ্ঞান দূষণ ও মুক্ত সমাজের বিনাশ

মাননিয়া মুখ্যমন্ত্রী,

আমার জন্ম ভারতবর্ষে। আমি ভারতের নানা প্রদেশে ও নানা শহরে শিক্ষালাভ করেছি। বর্তমানে আমি কানাডার বাসিন্দা ও নাগরিক এবং পেশাতে এক অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার। কোভিড নিয়ে নানা সরকারের নানা যুক্তিহীন কার্যকলাপের দর্শক হয়ে আমি যে উদ্বেগ ও আশঙ্কা বোধ করছি, তার চাপে পড়ে আপনাকে এই ছিঠিটি পাঠাতে বাধিত হলাম। এই ব্যাপারে আমি কানাডার প্রধান মন্ত্রী শ্রী ট্রুডো এবং অন্যান্য রাজনৈতিকদেরও লিখেছি। শীঘ্রই ভারত সরকারের শীর্ষপদাধিপতি শ্রী নরেন্দ্র মোদীকেও লিখব।

মিডিয়া এবং দুএকটি ব্যতিক্রম বাদে সব সরকার দিন রাত সর্বত্র উচ্চরবে কোভিড-নামা মন্ত্রবুলি আওড়াচ্ছে – যাতে বলা হচ্ছে যে কোভিড হল শতাব্দীর সবচেয়ে ভয়ংকর, দেশব্যাপী ও বিশ্বব্যাপী মহামারি, যাতে কোটি কোটি লোকের প্রাণহানির সঙ্কা আছে যদি না লোকেরা কঠোর চিকিতসা নির্দেশিকা ও সীমাবদ্ধতা মেনে চলে। এই বিধিনিষেধ তালিকায় আছে –

  • অপ্রয়োজনীয় সব ব্যাবসা বাণিজ্য, লেনদেন কারবার বন্ধ করতে হবে। কোনটা প্রয়োজনীয় এবং কি অপ্রয়োজনীয় তা সরকার ঠিক করবে।
  • লোকজনের একত্রিত হয়ে মেলামেশা থামাতে হবে। একে অন্যের থেকে ছয় ফুট দূরে থাকতে হবে। কোলাকুলি হাতধরা সব বন্ধ।
  • নাক-মুখ ঢাকা, শ্বাস-প্রশ্বাস হ্রাসকারী মাস্ক বা মুখোশ লোকজনের সামনে সবাইকে পরে থাকতে হবে।
  • কোভিড-উপস্থিতি নির্ণয়কারী অপ্রমাণিত কিছু টেস্ট পালন করতে যতদূর সম্ভব বাধ্য করা হবে সাধারণ নাগরিককে, তাকে কোভিডে ধরেছে কিনা জানতে, সে সুস্থ হোক বা না হোক।
  • দেশ জুড়ে অনাবশ্যক ভ্রমণ বন্ধ। কোনটা আবশ্যক আর কোনটা নয়, তা সরকার ঠিক করবে, নাগরিকরা করবে না।
  • যাদের সরকার মনে করছে কোভিড সংক্রামিত বা সংক্রমনের উপযুক্ত – তাদের নিজের বাড়িতে কারারুদ্ধ থাকতে হবে কয়েক সপ্তাহ, সে অসুস্থ হোক বা না হোক।
  • যারা এই আপাত প্রতারণার প্রতিবাদ করছে এবং এর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণে আগ্রহী তাদের গনস্বাস্থ বিরোধী ঘোষনা করে মুখ বন্ধ রাখা এবং তাদের কথা মিডিয়া থেকে দূরে রাখা হোক। বেশি প্রতিবাদ করলে চাকরি বরখাস্ত এমনকি হাজতবাস।
  • কোভিড মুক্তির যাদু টীকাগুচ্ছ যেই বাজারে আসবে, তক্ষুনি সবাই যেন তাদের নিঃশর্তভাবে বারংবার নিতে রাজি থাকে, এবং টীকার  নিরাপত্তার প্রমাণ দাবি করে যেন মিছিমিছি অনর্থ না পাকায়।

আরও নানা শর্ত আশা করা যায় জনতার ঘাড়ে চাপবে দিনে দিনে।

Letter to Mamata Bannerjee – Bangla (বাংলা)

কিন্তু দুঃখের কথা, যা আমার জন্মের দেশ ভারতবর্ষ, কিম্বা আমার গৃহীত দেশ কানাডা আজ অবধি করেনি, সেটা হল – নিজের দেশে, নিজেদেরই বিশেষজ্ঞদের নিয়ে, একটি আভ্যন্তরীণ তদন্ত চালানো এবং নিরপেক্ষ ভাবে নির্ধারণ করা এই কোভিড ইনফ্লুয়েঁজাটি ঠিক কতটা ভয়ংকর, কতটা দ্রুত ব্যাপ্তিশিীল বা কত তাড়াতাড়ি ছড়াচ্ছে, যেই টেস্টগুলি করা হচ্ছে তাতে সত্যিকারের কোনও ভয়াবহ ভাইরাস ধরা পড়ে, নাকি কানা খানা গানা ঘানার মত যা খুশি তাই অবাস্তব ও জালিয়াতি রিপোর্টে বেরোচ্ছে, কোভিডকে মহামারি বা অতিমারি ঘোষণা করাটা কি পুরোপুরি প্রমাণিত ও সমর্থনীয় ? এবং তারই সঙ্গে এটাও বিচার করা হষনি যে ঔ ছোট ব্যাবসাগুলো বন্ধ করে গরীবদের পেটে লাথি মারা, মেলামেশা বন্ধ করা, তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর যুদ্ধ ঘোষণা করা, লোকের যাতায়াত বন্ধ করা, সুস্থ সবল লোকজনদোর জোর করে নিজগৃহে কারারুদ্ধ করে রাখা – এই সব করে কি সত্যিই কোভিড রুখছে না সবই ভানুমতির খেল ?

যে প্রশ্নের নিপীড়নে আমি বিহ্বল তা হল, কেন স্বাধীন দেশের সরকাররা এক বিদেশী, অনির্বাচিত প্রতিষ্ঠানের অপ্রমানিত সংকেত বানীতে, এক কথায়, বিনা বিচারে, নিজেদের দেশের স্বাধীনতা, স্বসন্ত্রতা, মুক্তি, বানিজ্য, অর্থনীতি, সামাজিক সংগঠন, লোকসম্পদ ও ভবিষ্যতকে বিসর্জন দিতে রাজি হল। এরকম আত্মঘাতী অপকর্ম করার দূঃসাহস পেল কি করে সরকার? এর মূলে কি আছে ?

এই গুরুত্বপূর্ণ জ্বলন্ত প্রশ্নের উত্তর এখনও পাইনি।

মনে হচ্ছে যা চলছে তা যেন এক দেশ জোড়া সরকারী মহা দুরাচার। এর পেছনে যেন সন্ত্রাসী দেশদ্রোহীতার পরিকল্পনা আছে। এই চক্রান্তের কলকাঠি নাড়ছে যেন বিশ্বব্যাপী এক ষড়যন্ত্রীদল, যার মধ্যে লোক ঠকানো, শোষণমূলক মেডিকাল কূ-চিকিৎসকদের গোষ্ঠী এবং ব্যাঙ্ক ও কর্পোরেট সৈন্যদল যুক্ত।

এরই মধ্যে আমি চেষ্টা করেছি, এবং আরও করব, যাতে কানাডার কোনও না কোনও স্তরের সরকার রাজি হয় কোভিডের অস্তিত্ব, তার প্রাণনাশক তীব্রতা, এবং সরকারী বাধানিষেধের কার্যকারিতা নিয়ে স্বাধীন নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছভাবে ভাবে তদন্ত শুরু করে। এই স্বতন্ত্র ও নিজস্ব পরীক্ষা করতে ভারত সরকার অন্য অনেক দেশের মতই অনিচ্ছুক। এই কারণেই আমার সন্দেহ হচ্ছে যে কোভিডের ছুতো দেখিয়ে, এক বিশ্বব্যাপী ষড়যন্ত্রে যোগ দিয়েছে নানা দেশের রাষ্ট্রীয় এবং প্রাদেশিক সরকাররা, যে দলে ভারত ও পশ্চিম বঙ্গ সরকারও হয়তো রয়েছে। এই ষড়যন্ত্রের কলকাঠি নাড়া হচ্ছে বাইরে থেকে এবং এর মূুলে হয়তো কিছু অতি সমৃদ্ধ ও ক্ষমতাবান করপেরেট ও ব্যাঙ্ক গোষ্ঠীর এক নতুন পৃথিবী লুণ্ঠনের পরিকল্পনা কাজ করছে।

দয়া করে কিন্তু বাছাই করা করপোরেট ধ্বজাধারী মেডিকাল গোষ্ঠীর রিপোর্ট পেশ করবেন না এই বোঝাতে যে পণ্ডিতরা বলছে কোভিড সত্যি এবং ছোটখাটো দোকান ব্যবসা বন্ধ করা, মাস্ক পরা, হাত ধোয়া, পারস্পরিক দূুরত্ব রাখা, টীকা নেওয়া ইত্যাদি সবই প্রয়োজনীয় এবং বৈজ্ঞানিক সত্য। এদের পূর্বপুরুষরাই একদিন বলেছিল ডিডিটি বাচ্চাদের গায়ে ও মাথায় মাখলে মশার আক্রমন বা অন্য পোকামাকড়ের রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। তারাই একসময় বড়াই করে বলত গর্ভবতী মহিলারা যদি ভাল সিগারেট খায় তবে তাদের মন ও শরীর ভাল থাকে, গর্ভস্থ সন্তানের কোনও ক্ষতি হয়না এবং এই মহিলাদের নবযুগের সচেতন নারী বলে চেনা যায়। এই রকম করপোরেট বুলি শুনতে আমি রাজি নই এবং এদের বিজ্ঞতাকে আমি একতরফা এবং বিপজ্জনক মনে করি।

এই দৃশ্যপটের সামনে তাই আজ আপনার সরকারকে আবেদন করছি – এই কোভিড মহাকাব্যের আপাদমস্তক সব কিছুর পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করুন, বাইরের অতিপণ্ডিতদের কথায় কান না দিয়ে। এই নিরীক্ষার জন্য উপযুক্ত নিরপেক্ষ কর্মণ্য কুশলীদের নিযুক্ত করুন, যাদের রাজনীতি, টাকা বা চাকরির লোভ বা ভীতি দেখিয়ে লক্ষভ্রষ্ট করা যাবেনা। জনগনের সামনে তাদের পরীক্ষা ও রিপোর্ট তুলে ধরুন এবং জনগনকে তা স্বতন্ত্রভাবে জাচাই করার সুযোগ দিন। যদি এই সব জরুরি কাজ আপনার সরকারের নাগালের বাইরে থাকে, তবে কেন্দ্রীয় সরকারকে দাবী করুন এই কাজে নামতে এবং যতদিন এর যথার্থ প্রমাণ না পেশ করা যাচ্ছে ততদিন আপনার সরকার কোভিড নিয়ে কোনও বাধানিষেধ মানবে না – তা জানিয়ে দিন দিল্লিকে।

আর যদি মনে করেন কোভিডের ষড়যন্ত্রের পেছনের মহাসত্য প্রকাশ করলে আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলি আপনাদের অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ধ্বংস করে রাতারাতি দেশকে কপর্দকশূন্য দেউলিয়া করে দেবে, তবে জনগনের কাছে সত্য স্বীকারের সাহস রাখুন এবং জানান যে প্রাদেশিক ও কেন্দ্রীয় সরকারকে কোভিডের নামে অর্থনৈতিক হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছে।

যদি সরকার সত্যি বলতে অরাজি থাকে, জল আরও ঘোলা করে, এবং নাগরিকদের হেঁয়ালিতে সম্মোহিত, ভুল ভ্রান্তিতে বিহ্বল এবং মিথ্যা ভয়ে আতঙ্কিত করে রাখার সিদ্ধান্ত নেয়, তবে স্বাধীন চিন্তাবিদরা এটাই সন্দেহ করতে পারেন যে নেতা নেত্রীরা দেশের ও দশের বিশ্বাসঘাতকতা করছে এবং এই কূকর্মে জড়িতদের কারাবাস হওয়া উচিত।

একটি প্রদেশের নেত্রী হয়ে আপনার সরকারের মনবল আছে কিনা এই মহারোগের মহাষড়যন্ত্রের স্বতন্ত্র সত্যানুসন্ধানে লিপ্ত হতে তার বিচার আপনারা করবেন। মনে করি এই চিঠির আবেদনকে উপেক্ষা করে একে বাকি আবর্জনার সঙ্গে ট্রাশ করাটা আনেক সোজা হবে, এবং হয়ত সেটাই আপনি ওপরওয়ালার দেওয়া নির্দেশ ও কর্তব্য ভেবে পালন করবেন।

তাই আমিও, এক বিশ্ব নাগরিক হিসেবে, আমার কর্তব্য পালন করব – এই চিঠিটি সর্বজনীন করে, সবার সামনে প্রকাশ করে।

কিন্তু, যদি আপনার সরকার বিস্ময়কর ব্যতিক্রম দেখিয়ে সত্যিই কোভিড বিচারে নিযুক্ত হন, বা রাষ্ট্র সরকারের কাছে প্রকাশ্যে দাবী রাখেন কোভিড-সংক্রমন-বিপদ এবং তা রোখার পদ্ধতির উপযোগিতার প্রমাণ পেশ করতে, তবে আমার বিচারে আপনার সরকার তার সাংবিধানিক কর্তব্য, অর্থাত নাগরিকদের সুরক্ষা করা, তা পালন করবে, এবং সাথে সাথে আমার অকৃত্রিম প্রশংসা ও শ্রদ্ধা অর্জন করবে।

আপনার সরকারকে এই অন্তর্দর্শন ধ্যানের অহ্বান জানিয়ে শেষ করছি।

ইতি
শান্তনু মিত্র

১০৮৯১ চেরি লেন, ডেল্টা, বৃটিশ কলুম্বিয়া, কানাডা

Comments welcome

আপনাদের মন্তব্য তলায় লিখুন – আহ্বান জানাচ্ছি।